লাল চাল সাধারণত ঢেঁকিছাঁটা চাল, কুড়াকাটা চাল ও ব্রাউন রাইস নামেও পরিচিত। আমরা সাধারণত চাল বলতে যেই সাদা অংশটুকু চিনি সেটি ছাড়াও চালের বাইরে খোসা ও কুড়া বা ব্র্যানের স্তর থাকে।
সাদা চালের ক্ষেত্রে চাল ছাড়া অন্যান্য স্তরগুলো ছাঁটাই করে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু লাল চালে কেবল খোসাটিই ছাঁটাই করা হয়। তাই লাল চালকে পূর্ণশস্য বলা হয় এবং এটি সাদা চালের তুলনায় অধিক ফাইবার ও খনিজ সমৃদ্ধ হয়।
লাল চাল কেন লাল?
লাল চালে প্রচুর অ্যানথোসায়ানিন নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট লাল রঙের ফলমূল ও শাকসবজিতে পাওয়া যায়। অ্যানথোসায়ানিন শরীরে প্রদাহ কমায়। অ্যালার্জি কমায়।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্যও সাদা চালের চেয়ে লাল চাল ভালো।
তবে তিনবেলা প্লেট ভরে লাল চালের ভাত খেলে কিন্তু হবে না! কাপে মেপে পরিমাণে অল্প, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যেটুকু সাদা ভাত খাওয়া উচিত,
সেটুকু লাল চালের ভাত খেতে পারেন।
লাল চালের উপকারিতা
সুস্বাস্থ্যের জন্য লাল চাল খাওয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা হলো—
হজম প্রক্রিয়াতে
লাল চালে ফাইবার বা আঁশ থাকে। বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার সুফলের মধ্যে রয়েছে—
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সুরক্ষা পাওয়া
নিয়মিত পায়খানার অভ্যাস তৈরি হওয়া
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
লাল চালে অদ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে। এই ধরনের ফাইবার হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি নাড়িভুঁড়ির ভেতরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে অবদান রাখে। এসব ব্যাকটেরিয়া পেটের সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লাল চালে ভিটামিন বি১, বি৩, বি৬ ও ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস প্রভৃতি খনিজ পদার্থ বেশি মাত্রায় থাকে। শরীরের জন্য এগুলো খুব দরকার। সাদা চাল তৈরির প্রক্রিয়ায় চালের এসব উপাদান অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। আঁশও কমে যায়।
এসব বিবেচনায় লাল চাল নিঃসন্দেহে সাদা চালের চেয়ে ভালো।
ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া রোধে
চালে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট থাকে। কার্বোহাইড্রেট ভেঙে আমাদের রক্তে সুগার তৈরি হয়। যেই খাবারগুলো খেলে রক্তে আস্তে আস্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ে, হুট করে অনেক বেড়ে যায় না—সেই খাবারগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
সাদা চালের ভাত রক্তে সুগারের পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়ায়। শরীর খুব তাড়াতাড়ি এই চাল ভেঙে সুগার তৈরি করতে পারে। ফলে অল্প সময়ে রক্তের সুগার অনেক বেড়ে যায়।
অন্যদিকে লাল চালের ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এটি ভাঙতে শরীরের বেশ সময় লাগে। রক্তে সুগারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন কম প্রয়োজন হয়। সেই সাথে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে।
এভাবে লাল চাল টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায় এবং রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হৃৎপিণ্ডের সুস্থতায়
হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনীর রোগসহ অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে লাল চালের মতো পূর্ণশস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা বেশি পূর্ণশস্য খায় তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কম থাকে।
লাল চালে প্রচুর পরিমাণে থাকা ভিটামিন বি৬ শরীরের প্রয়োজনীয় লোহিত কণিকা ও সেরোটোনিন উৎপাদন করে। এতে বেশি পরিমাণে আয়রন থাকায় খেতে খুব সুস্বাদু নয়।
কিন্তু রক্তাল্পতায় ভোগা মানুষের জন্য লাল চাল ওষুধের মতো কাজ করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে বলে লাল চাল ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও উপকারী।
লাল চালে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। উপাদান দুটি একসঙ্গে হাড় ও দাঁত ভালো রাখে।
হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ম্যাগনেশিয়াম মাইগ্রেন কমায়, রক্তচাপ কমায় ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
লাল চালের অ্যানথোসায়ানিন ত্বকের ভাঁজ কমায়, ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় সূর্যের আলোর ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধে
লাল চালের কুড়ায় ‘ফ্ল্যাভোনয়েড’ নামক কিছু রোগ প্রতিরোধক পদার্থ থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়াও লাল চাল ও অন্যান্য পূর্ণশস্য হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিসসহ অগ্ন্যাশয় ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
লাল চালে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে। এভাবেও এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণায় দেখা যায় লাল চালের ভাত, ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।